
জাতীয় যুব দিবস উদযাপন (১২ই জানুয়ারি)
জাতীয় যুব দিবস
(১২ই জানুয়ারি)
নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতন এর বার্ষিক অনুষ্ঠান সূচীর প্রথমে রয়েছে জাতীয় যুব দিবস উদযাপন। প্রতিবছর ১২ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম দিবসে সারা ভারত এবং রাজ্যজুড়ে বীর সন্ন্যাসী স্বামীজিকে যে শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করা হয়,তাদের সমর্থন ১৯৯o সাল থেকে নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনে জাতীয় যুব দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ঐদিনে বিদ্যানিকেতনের 'সংস্কৃতি ভবন'-এ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, অভিভাবকগণ ও অন্যান্য অতিথিগণের সমাবেশে স্বামীজীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রস্তুতিপর্বে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংগীত, আবৃত্তি, স্বামীজির বাণী পাঠ,চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি বিষয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের দিন শুরুতে মঞ্চে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও স্বামীজীর প্রকৃতিতে পুস্পমাল্য প্রদান করা হয়। পরে বিভিন্ন বক্তা স্বামীজির জীবন ও জাতীয় স্তরে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরই ফাঁকে সঙ্গীত, আবৃত্তি প্রভৃতি অনুষ্ঠানটিতে প্রাণবন্ত করে তোলে। সর্বশেষে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিগণ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

নেতাজী-জন্ম-জয়ন্তী (২৩শে জানুয়ারি)
নেতাজী-জন্ম-জয়ন্তী
(২৩শে জানুয়ারি)
নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতন এর সারা বছরের অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্দীপনময় অনুষ্ঠান 'নেতাজি- জন্ম-জয়ন্তী'। প্রতিবছর 23 শে জানুয়ারি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা বিপ্ল বীর নেতাজির জন্মদিন প্রবল উৎসাহ ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করা হয়। বিদ্যানিকেতন প্রতিষ্ঠার দু'বছর পরে অর্থাৎ ১৯৫o সাল থেকে পালিত এ উৎসব কেবলমাত্র বিদ্যানিকেতন প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ থাকেনা। 23 শে জানুয়ারির সকালে বাইরের মাঠে সকল ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে সমবেত হয়। এরপর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও সামান্য আলোচনার পর বিভিন্ন সাজসজ্জায় সমৃদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরে নানা পথ পরিক্রমা করে বিদ্যানিকেতনে ফিরে আসে। তখন ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্যদের মধ্যে কমলা ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। দুপুর 12 টা 15 মিনিটে নেতাজীর জন্ম লগ্নে বিপুল শঙ্খ ধ্বনির দ্বারা মহান বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশময় সপ্তাহব্যাপী প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান রূপে 'নেতাজি জন্মজয়ন্তী'-কেই গ্রহণ করা হয়েছে।

শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা (শ্রী পঞ্চমী)
শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা
(শ্রী পঞ্চমী)
বিদ্যানিকেতনের করণীয় কৃত্যালির অন্তর্গত শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা মূলত ছাত্রছাত্রীদের এক মহান মিলনৎসব ।প্রতিবছর শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যানিকেতনে বাগদেবীর আরাধনার আয়োজন হয়ে থাকে।পূজোর কদিন আগে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক সকলে রুচি সম্মত মন্ডপ সজ্জায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।আগের দিন মহা ধুম-ধাম সহকারে দেবীর প্রতিমা আনয়ন এবং পুজোর দিন ভোর থেকেই পুজোর আয়োজন চলে প্রথামতোই। বিদ্যানিকেতনের প্রথা অনুযায়ী পদ্মাসনে উপবিষ্ট দেবীর সামনে বড় আকারের পেতলের কলস ঘটরূপে স্থাপিত হয়।বৈদিক মতে দেবীর আরাধনা ও যজ্ঞ সমাপনের পর অঞ্জলি প্রদান করা হয়। এরপর প্রথমে পুজোর প্রসাদ বিতরন এবং পরে ছাত্ৰ-শিক্ষক-অভিভাবক সকলের জন্য ভোজের আয়োজন করা হয়। শ্রী পঞ্চমীর সন্ধ্যায় আরতিও এক উপভোগ্য বিষয়।

বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
বার্ষিক ক্রীড়া
প্রতিযোগিতা
বিদ্যানিকেতনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একটি অবশ্য-করণীয় বিষয়।ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শিক্ষারই অঙ্গ। তাই সেই শিক্ষার পরিমাপ ও নতুন প্রতিভার সন্ধান-কল্পে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিদ্যানিকেতনের বিশাল প্রাঙ্গনে এ ক্রীড়ানুষ্ঠানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়।প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর প্রতিযোগীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। এরপর মূল অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রীদের দৌড় প্রতিযোগিতা, হাই জাম্প,লঙ জাম্প,বর্শ ছোঁড়া,বিস্কুট রেস,দড়ি টানাটানি প্রতিটি বিষয়ই সুস্শৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন করা হয়। তবে সব চাইতে আকর্ষণীয় হয় চারশো মিটার ও আটশো মিটার রিলে রেস। প্রতিযোগিতার ফাঁকে ফাঁকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও মানপত্র বিতরন করা হয়। এই প্রতিযোগিতা তথা অনুষ্ঠানের শেষে সবার জন্য সামান্য জলপানের ব্যবস্থা থাকে।

প্রতিষ্ঠা-দিবস উদযাপন(৩রা মার্চ)
প্রতিষ্ঠা-দিবস উদযাপন
(৩রা মার্চ)
নেতাজী সুভাষ বিদ্দ্যানিকেতনের বার্ষিক অনুষ্ঠান সূচীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন। দেশ বিভাগ ও দেশের স্বাধীনতা লাভের পপির ১৯৪৮ সালের ৩রা মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বিদ্যানিকেতন।তাই প্রতিবছর ৩রা মার্চ প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। প্রধানতঃ ঐ দিন অর্থাৎ ৩রা মার্চ বিদ্যানিকেতনের পরিচালন-সমিতির উদ্যোগে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে থাকে।সেদিন খুব সকালে বিদ্যানিকেতনের সকল ছাত্রছাত্রী,শিক্ষক-শিক্ষয়ত্রী ও পরিচালন সমিতির সদস্যগন বিদ্যানিকেতন প্রাঙ্গনে সমবেত হন।পরিচালন সমিতির সভাপতি সেখানে বিদ্যানিকেতনের পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর ছাত্রছাত্রীদের একটি র্যালি আগরতলা শহর পরিক্রমা করে। বিদ্যানিকেতনে ফেরার পর সকলকে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। বিদ্যানিকেতন-প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বহু বৎসর 'প্রতিষ্ঠা দিবসের' অঙ্গ রুপে সপ্তাহব্যাপী 'শিক্ষা মেলা' ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বেবস্থা হতো। কিন্তু বিগত প্রায় চার দশক ধরে বিভিন্ন কারণে এই বর্ধিত অনুষ্ঠান বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বার্ষিক পুরস্কার বিতরণোৎসব
বার্ষিক পুরস্কার
বিতরণোৎসব
সাধারণতঃ জুন-জুলাই মাসে নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনে বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।আগে এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠা দিবসের সহযোগী অনুষ্ঠান ছিল কিন্তু বর্তমানে মার্চ মাসে মধশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা থাকায় অনুষ্ঠানটিকে পিছিয়ে আনা হয়েছে।এখন তথাকথিত 'শিক্ষা-মেলা' স্থগিত রেখে শুধু বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও নিদিষ্ট দিনে বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরে বিভিন্ন বিষয়ে পুরস্কারে বিতরণেই এই উৎসব সীমাবদ্ধ।। নির্ধারিত দিনটিতে বিদ্যানিকেতনের 'সাংস্কৃতিক ভবন'-এ সকল ছাত্রছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষয়ত্রী ও অভিভাবকগনের সমাবেশ ঘটে।সুসজ্জিত মঞ্চে প্রথমে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়।এরপর বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক তাঁর বার্ষিক বিবরণী পাঠ করেন।পরে বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের সমবেত বা একক সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।সবার শেষে প্রথমতঃ বিগত বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতীদের ও পরে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

'আগমনী' অনুষ্ঠান
বিদ্যানিকেতনের বার্ষিক অনুষ্ঠান সূচিতে 'আগমনী' অনুষ্ঠানটি অনেক পরে সংযোজিত হয়েছিল।প্রায় তিন দশক আগে এর সূচনাকাল থেকেই পূজাবকাশের আগের দিনটিতে বিদ্যানিকেতনের 'সংস্কৃতি ভবনে' সকল শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষয়ত্রীগণ সমবেত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করতো।প্রথমতঃ চন্ডীপাঠ ও পরে কয়েকটি নৃত্যগীতের পর উপস্হিত সবার জন্য দেবী দশভুজার আশীর্বাদ কামনাই ছিল 'আগমনী'র বিষয়। পরবর্তীকালে চন্ডীপাঠের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে এবং অন্যান্য নৃত্যগীত,আবৃত্তি প্রভৃতির মাধ্যমেই 'আগমনী' উদযাপিত হতে থাকে। অনুষ্ঠানের শেষে সকলের শুভকামনা করে প্রধান শিক্ষক তে পূজা-অবকাশের ঘোষণা দেন।

'শিক্ষক-দিবস' উদযাপন(৫ই সেপ্টেম্বর)
'শিক্ষক-দিবস' উদযাপন
(৫ই সেপ্টেম্বর)
প্রতিটি শিক্ষায়তনেই শিক্ষক-দিবস উদযাপন একটি আবশ্যিক বিষয়। প্রতিবছর ৫ই সেপ্টেম্বর নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনেও ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা মহান দার্শনিক ও জাতীয় শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর জন্মদিন পালন করে।ঐদিন রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে সরকারীভাবে এবং মহা সমারোহে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে।সেখানে সবার উপস্থিতি নির্দেশিত থাকায় বিদ্যানিকেতনে বড় কোন অনুষ্ঠান হয়না। শুধু ডঃ রাধাকৃষ্ণন-এর প্রকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।পরে শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী ওপরের ক্লাসের ছাত্র -ছাত্রীগণ নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রী ভাইবোন দের শিক্ষা বিতরণ করে। এভাবেই মহান শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে।